ছবি সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রীরা কীভাবে দেশ থেকে পালাচ্ছে তা খুঁজে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুনতে পাই, সাবেক মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। তারা কীভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছে এই বিষয়গুলো দেখার জন্য বলেছি।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আজকে পতন হওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। ভারতে থেকে তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যেসব ক্যাম্পেইন চলছে, যেসব অপপ্রচার চলছে সে বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি। তারা যেন ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসে সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক মূলহোতা বলে মনে করে বিএনপি। দলটির মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি করেছি।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের ২ মাস হতে চলছে। কিন্তু প্রশাসনের ভেতর থেকে স্বৈরাচার দোসরদের, যারা তাদেরকে অন্যায়-অবিচার ও গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে তারা অনেকে এখনও স্বপদে বহাল আছে। আমরা অবিলম্বে তাদেরকে সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে আনার কথা বলেছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জেলা প্রশাসকদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও আমরা বলেছি। চুক্তিভিত্তিক কিছু নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দুই-এক ব্যক্তি আছেন, যারা অন্তর্বর্তী সরকারও গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যকে ব্যাহত করতে তাদেরকে সহযোগিতা করেছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগের কোনো পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, হাইকোর্ট বিভাগে অধিকাংশ নিয়োগ হয়েছিল দলীয় পরিচয়ে। তাদের ৩০ জন বিচারক এখনও বহাল তবিয়তে কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমরা বলেছি। দলকানা কিছু বিচারক আছেন তাদের অপসারণের কথা বলেছি। একই সঙ্গে অতিদ্রুত পিপি ও জিপি নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছি।
‘নির্বাচন হচ্ছে ওনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান ওনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার।
বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কি বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো অত্যন্ত সহযোগিতার সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি।
‘গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে পদোন্নতিবঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে, যাদেরকে দুর্নীতি অথবা হত্যার সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি যে তাদেরকে জামিন দেওয়া হচ্ছে। এটা খুব উদ্বেগজনক। এই বিষয়টা আমরা দেখার জন্য বলেছি।
শেখ হাসিনার শাসনামলে দায়ের হওয়া সব মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি, বলেন ফখরুল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতার সৃষ্টির পেছনে কারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুম-খুনের সঙ্গেথে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের একটি দল এসেছে বাংলাদেশে। সেই দলকে যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে জড়িত আছেন তারা জাতিসংঘের টিমকে সেভাবে সহযোগিতা করছে না। বিষয়টি আমরা বলেছি।’
দুর্গাপূজা প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, সনাতনী কিছু মানুষ… সবাই না, তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। হিন্দু কমিউনিটির ওপর নির্যাতন হচ্ছে ইত্যাদি কথা বলছে, যা সর্বব্যৈ মিথ্যা। এটা তাদের সূদূর পরিকল্পনা তাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমরা বলেছি। এই কথাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বলেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এটি তৃতীয় দফা সংলাপ।
সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট সংলাপ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান। সূএ: ঢাকা পোস্ট ডটকম